নৈরাশ্য থেকে আশা: মনিপাল হসিপিটাল, সল্ট লেক ব্যবসায়ীর হাত রক্ষা করেছে ভয়ংকর দুর্ঘটনার পর

Date:

Share:

জীবন এক মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। এক মুহূর্তে, সবকিছু স্বাভাবিক হতে পারে। এবং এরপর, অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতে পারে যা একজনের ভবিষ্যৎ বদল করতে পারে। ঠিক এরকমই হয়েছে বারাসতের 66 বর্ষীয় ব্যবসায়ী গোপাল রায়ের ক্ষেত্রে। নিতান্ত সাধারণ একটি দিন মোড় নিল সমাপ্তিহীন দুঃস্বপ্নে যখন তিনি বাইক থেকে পড়ে যান এবং একটা বাস তাঁর হাতের ওপর দিয়ে চলে গেলে ভয়ংকর আঘাত পান। বারবার এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে তিনি ও তাঁর পরিবার সম্মুখীন হয়েছিলেন অনিশ্চয়তার। প্রাথমিক ডায়াগনসিস ছিল ভয়ংকর খারাপ – তাঁর হাত চলে গিয়েছিল প্রায় ঠিক হবে না এরকম পরিস্থিতিতে, হাড় হয়ে গিয়েছিল ছিন্নভিন্ন এবং অ্যাম্পুটেশনের আশঙ্কায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁরা আশা হারাতে শুরু করেছিলেন যতক্ষণ না তাঁকে পাঠানো হয়েছিল মনিপাল হসপিটাল, সল্ট লেকে, যেখানে বিশেষজ্ঞ সার্জনের একটি টিম মিশন নিয়েছিলেন যে শুধু তাঁর হাত নয়, জীবনের পথও ঠিক করে দেবেন।

মনিপাল হসপিটালের কনসালট্যান্ট – অর্থোপেডিক (হাত ও কবজি) সার্জন ডাক্তার আর্য রায় বলেছেন, ‘এধরনের কেসে সাধারণত ফোকাস থাকে রোগীর জীবনের ওপর এবং অঙ্গ আঘাত পেছনের সারিতে চলে যায়। কিন্তু মনিপালের মতো সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতালে আমরা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যাতে প্রয়োজনীয় যত্ন পায় সেটা নিশ্চিত করি। যদি শ্রী রায়কে কয়েক ঘণ্টা পর নিয়ে আসা হত, আমরা হয়তো তাঁর হাত রক্ষা করতে সক্ষম হতাম না। সময়ের সূক্ষ্ম ভারসাম্য এবং বিশেষজ্ঞতা ফারাক গড়ে দিয়েছে।

‘তাঁর শরীরের অন্যান্য বিষয় স্থিতিশালী থাকলেও, তাঁর হাতের আঘাত ছিল মারাত্মক। অন্যান্য অঙ্গ স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু হাতের আঘাত ছিল ব্যাপক। অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত করা হয়েছিল খুব সূক্ষ্ম, উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন প্রণালির জন্য যা চলেছিল প্রায় তিন ঘণ্টা। লক্ষ্য ছিল অবশ্যই তাঁর রক্তপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা, ভাঙা হাড় জোড়া লাগানো এবং আঙুলগুলো ফের গঠন করা। একটু আঙুলে সারানো-অযোগ্য আঘাতের ফলে সেটি অ্যাম্পুটেশন করতে হয়, কিন্তু বাকি হাত অক্ষত থাকে।’

প্রাথমিক অস্ত্রোপচার ছিল মাত্র সূচনা। দুদিন পর, শ্রী রায়কে আরেকটি প্রণালির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেখানে যত্ন নিয়েছিলেন মনিপাল হসপিটাল, সল্ট লেকের প্লাস্টিক ও রিনকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির কনসালটেন্ট ডাক্তার সায়েদ ফয়জল। তিনি বলেছেন, ‘আঘাত ছিল ব্যাপক। প্রথমে আমরা সন্দেহ করেছিলাম যে ফ্ল্যাপ কভারেজ দরকার পড়বে, যা হাতের মারাত্মক ট্রমা কেসে সাধারণত আবশ্যক হয়। যাইহোক, আমরা যখন প্রণালি শুরু করি, আমরা দেখতে পাই যে তাঁর হাত প্রত্যাশার চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। যার অর্থ হল, স্কিন গ্র্যাফটিং দরকার ছিল, আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করেছি সম্ভাব্য শ্রেষ্ঠ ফলাফল নিস্চিত করতে। এই প্রণালির প্রতিটি ধাপে আমাদের অগ্রাধিকার ছিল ক্রিয়াকর্ম ফিরিয়ে আনা।’

কয়েকদিন পর, শ্রী রায়ের আরেকটি অস্ত্রোপচার হয় কিছু জীর্ণ টেন্ডন ঠিক করার জন্য এবং তাঁর হাতের কাঠামো আরও ঠিক করার জন্য। দিনের পর দিন তিনি দুর্দান্ত উন্নতি দেখিয়েছেন। ছোট ছোট জয় যেমন একটা কাপ ধরা, কোনো বস্তু তোলা অথবা এমনকি মাত্র তাঁর আঙুলের নিয়ন্ত্রণও হয়ে উঠেছিল তাঁর রিকভারির নতুন অর্জন।

রোগীর ছেলে অর্পণ রায় এই বিষয়টি প্রতিফলিত করে বলেছেন, ‘এটা ছিল দীর্ঘ যাত্রা, কিন্তু ডাক্তাররা যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সেটাই যাবতীয় ফারাক গড়ে দেয়। যখন আমরা মনিপাল হসপিটালে পৌঁছেছিলাম, ততদিনে দুটো হাসপাতাল আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছিল। যে মুহূর্তে আমরা এমার্জেন্সি রুমে প্রবেশ করেছিলাম তখনই বুঝেছিলাম যে আমরা সঠিক জায়গায় এসেছি। ডাক্তার আর্য রায় এবং ডাক্তার সায়েদ ফয়জল আমার বাবার চিকিৎসা করেছেন, আশা দিয়েছেন আমাদের। আমার বাবার হাতে প্রায় কোনো টিস্যুই ছিল না সঠিক জায়গায়, কিন্তু ডাক্তারদের টিম হাল ছাড়েননি। তাঁরা সম্ভাব্য সব উপায় গ্রহণ করেছেন যাতে বাবা তাঁর হাত পুরোটাই না হারায়। কনসালট্যান্ট, অ্যানেস্থেসিয়োলজিস্ট ডাক্তার পার্থ সেন এবং তাঁর টিমকে বিশেষ ধন্যবাদ গোটা প্রণালিতে আমার বাবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। তাঁদের দক্ষতা ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার জন্যই আমার বাবা এখন দ্বিতীয় সুযোগ পেয়েছেন।’

যদিও হাতের সম্পূর্ণ কার্যকারিতা ফিরতে সময় লাগবে, কিন্তু ডাক্তাররা আশাবাদী। আগামী কয়েক মাসে শ্রী রায় পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন এবং তাঁর হয়তো সামান্য সংশোধনমূলক প্রণালির দরকার পড়তে পারে, কিন্তু শক্তিশালী রিকভারির ভিত্তি ইতিমধ্যে রচিত হয়েছে। হাত হয়তো তাঁর মূল শক্তি ফিরে পাবে না, কিন্তু পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে তাঁর হাত ব্যবহারযোগ্য হবে এবং সেটাই হবে বিজয়।

Subscribe to our magazine

━ more like this

কেতুগ্রামে সামন্ত পরিবারের ১৭৯ বছরের ঐতিহ্যশালী কালিপুজো

পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে সামন্ত বাড়ির পুজো ভিন্ন মাত্রা এনেছে গোটা এলাকাজুড়ে।১৭৯ বছরে পদার্পণ করলো এবারের পুজো। জানা গেছে, ১৭৯ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে...

Kolkata to Host Global Brand Guru Erich Joachimsthaler at the 24th Edition of India’s Leading Brand Management Platform – CII Brand Conclave 2025

CII today announced that renowned international brand strategist and author Dr Erich Joachimsthaler will visit Kolkata to lead the 24th edition of CII Brand...

RSB Retail’s South India Shopping Mall Opens Its 35th Flagship Showroom in Hubbali, Karnataka

The favourite shopping destination of Telangana and Andhra Pradesh, South India Shopping Mall marked a major milestone by stepping into Karnataka with the grand...

Around 11,45,000 students participated in Aakash Educational Services Ltd’s prestigious National Scholarship Exam, ANTHE 2025

Aakash Educational Services Ltd. (AESL), the national leader in test preparatory services for aspiring doctors and IITians, with more than 415 centers across the...

Festive Season and Your Heart: How to Balance Indulgence with HealthDr Sunandan Sikdar, Consultant- Cardiology, Narayana Hospital, Barasat

The festive season brings joy, color and community celebrations. Yet, alongside the lights and music, the festive season can also create invisible stress on...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here