স্পেশাল অলিম্পিক্স ভারত ন্যাশনাল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫–এর পর্দা নামল সম্প্রতি সল্টলেকের এসএআই কমপ্লেক্সে। দেশজুড়ে ২২টি রাজ্য থেকে আসা ৩০০-র বেশি ক্রীড়াবিদ তিন দিন ধরে সিনিয়র, জুনিয়র ও সাব-জুনিয়র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বুদ্ধিবিভ্রাটসম্পন্ন অ্যাথলেটদের জন্য এ বছর দেশের অন্যতম বড় আয়োজন ছিল এটি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্পেশাল অলিম্পিক্স ভারতের প্রেসিডেন্ট ডঃ মল্লিকা নাড্ডা। তিনি খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলা, সাহস এবং স্পোর্টসম্যানশিপের প্রশংসা করে বলেন, “কলকাতার আপ্যায়ন ও উষ্ণতা দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা দল, পরিবার ও কর্মকর্তাদের কাছে এই আয়োজনকে বিশেষ করে তুলেছে।”
প্রতিযোগিতায় ছিল স্পেশাল অলিম্পিক্সের প্রচলিত ফরম্যাট—বিশেষত সিনিয়র বিভাগে ইউনিফাইড ৫-এ-সাইড ফুটবল, যেখানে তিন জন অ্যাথলেটের সঙ্গে খেলেন দুই জন পার্টনার। কনিষ্ঠ বিভাগে ছিল মানানসই নিয়ম। তিন দিনে এসএআই গ্রাউন্ড দেখেছে টানটান প্রতিযোগিতা, দৃঢ় রক্ষণ এবং রাজ্যগুলির মধ্যে চোখে পড়ার মতো বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ। কর্মকর্তাদের মতে, এ ম্যাচগুলি ২০২৭ সান্তিয়াগো স্পেশাল অলিম্পিক্স ওয়ার্ল্ড সামার গেমসের প্রাথমিক নির্বাচনী ধাপ।
ডঃ নাড্ডা জানান, কলকাতায় দেখা প্রতিভা ভারতের আন্তর্জাতিক ফুটবল দলের গঠনকে আরও শক্ত করবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ভারত ১৯৮৬ থেকে ১৬ বার বিশ্ব গেমসে অংশ নিয়ে ধারাবাহিক উন্নতি করেছে। ২০২৩ বার্লিন গেমসে ভারতে আসে ২০০টি পদক, আর ২০২৫ তুরিন শীতকালীন গেমসে ৩৩টি পদক, যা বৃদ্ধির ধারাকে স্পষ্ট করে।
তিনি আরও জানান, ভারতের ইউনিফাইড পুরুষ ও মহিলা বাস্কেটবল দল আগামী ৩ ডিসেম্বর পুয়ের্তো রিকোর বিশ্ব গেমসে খেলবে। ইতিমধ্যেই ভারতের স্পেশাল অলিম্পিক্স ফুটবলাররা আন্তর্জাতিক মঞ্চে চিহ্ন রেখে এসেছেন—সুইডেনের গথিয়া কাপ ভারত জিতেছে টানা দুই বছর।
পশ্চিমবঙ্গ স্পেশাল অলিম্পিক্সের অন্যতম সক্রিয় অধ্যায়। ২০২৩ বিশ্ব গেমসে বাংলার অ্যাথলেটরা জিতেছিলেন ৯টি সোনা, ৪টি রুপো ও ১টি ব্রোঞ্জ। ২০২৫ সালে সৌরভ রায়, পুষ্পল কর ও বিকি দুলেই ছিলেন ভারতের গথিয়া কাপজয়ী দলে। আয়োজকদের ভাষায়, কলকাতার এই প্রতিযোগিতা রাজ্যের এই ঐতিহ্যকে আরও শক্ত ভিত্তি দিল।
সপ্তাহের শুরুতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সুশীল পোদ্দার, কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনস-এর প্রেসিডেন্ট। উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও শিক্ষা–মহলের ব্যক্তিত্ব—দেবাশীষ দত্ত, রুচিকা গুপ্তা, অরুণা তান্তিয়া, রজিত ভূতোরিয়া। তাঁদের অংশগ্রহণ খেলাধুলো, শিল্পসংস্থা ও নাগরিক সমাজের নতুন সহযোগিতার পরিচয় বলে মনে করছেন অনেকে।
স্পেশাল অলিম্পিক্স ভারতের সহ-সভাপতি ও পশ্চিমবঙ্গ অধ্যায়ের প্রেসিডেন্ট সি এ পবন কুমার পাতোদিয়া বলেন, মেধাবিভ্রাটসম্পন্ন ক্রীড়াবিদদের খেলাধুলো, স্বাস্থ্য ও নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে সংস্থা। “অ্যাথলেটরা কঠোরভাবে অনুশীলন করে, ভয়হীনভাবে লড়াই করে। তারা সহানুভূতি নয়—সমান সুযোগ চায়,”—বললেন তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে ডঃ নাড্ডা কর্পোরেট, সরকার ও কমিউনিটি–সংস্থাগুলিকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্রীড়া পরিকাঠামোকে শক্ত করতে। “Each One Reach One”—এই জাতীয় বার্তা স্মরণ করিয়ে তিনি সাধারণ মানুষকেও উৎসাহিত করেন বিশেষ অলিম্পিক্স অ্যাথলেটদের পাশে দাঁড়াতে।
মেডেল প্রদান, করমর্দন আর শুভেচ্ছা–বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ২০২৫ সংস্করণ। আয়োজকদের মতে, এটি কেবল এক ক্রীড়া–আয়োজন নয়—বরং অন্তর্ভুক্তির এক শক্তিশালী দৃষ্টান্ত। যুব মন্ত্রক স্বীকৃত স্পেশাল অলিম্পিক্স ভারত দেশের ৩৩টি রাজ্যে হাজার হাজার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে কাজ করছে।
শেষে কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্ভুক্তি আসলে মাঠেই ফুটে ওঠে—উদ্যমে, দলগত চেষ্টায় এবং ভাগ করা গর্বে।

