পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ের জীবন বাঁচাল মেডিকা : ট্রমা থেকে ফেসিয়াল রিকনস্ট্রাকশন, ঝাড়খণ্ডের পাঁচ বছর বয়সীর ফিরে আসার কাহিনী

Date:

Share:

ঝাড়খণ্ডের গিরিডি অঞ্চলের অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতির মধ্যে, যেখানে রয়েছে পাহাড়, এক অদম্য সাহসের ঘটনা অবাক করে দিল সবাইকে। একটি ট্র্যাজিক দুর্ঘটনায় পাঁচ বছর বয়সী গীতাঞ্জলির জীবন মুহূর্তে যেন বদলে গিয়েছিল। গত ২৫ শে ডিসেম্বর, পুরো জেলা ক্রিসমাস উদযাপন করছিল অনেক আনন্দ উদ্দীপনার মধ্যে। সেই সময় বাবা মায়ের সাথে বাইকে যাওয়ার সময় ছোট্ট গীতাঞ্জলির অ্যাকসিডেন্ট হয়। একটি ট্রাক বাইকটিকে ধাক্কা মারে। এর ফলে গীতাঞ্জলি ছিটকে গিয়ে পড়ে রাস্তার আরেক দিকে। মুখের মধ্যে অনেকটা আঘাত লাগে। তার বাবা মা দ্রুত তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় যেখানে দ্রুত রিসাসিয়েট করার পদ্ধতি শুরু হয়। গীতাঞ্জলির যে স্পেশালাইজড চিকিৎসার প্রয়োজন, এটা বুঝে তাকে ২৬ শে ডিসেম্বর মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে আনা হয়, যেটি পূর্ব ভারতের অন্যতম সবচেয়ে প্রাইভেট হসপিটাল চেন। গীতাঞ্জলি ভর্তি হয় ডঃ অখিলেশ কুমার আগরওয়ালের অধীনে, যিনি কনসালটেন্ট, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে। ছোট্ট গীতাঞ্জলির বেশ কিছু অস্ত্রোপচার করা হয় এবং পুরোদস্তুর ফেসিয়াল রিকনস্ট্রাকশন করা হয় দুই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের। তারপর পাঁচ সপ্তাহ ধরে তার রিহ্যাব চলে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে সব বাধা বিপত্তি এড়িয়ে তার লড়াই সত্যি অসাধারণ। এই পুরো প্রক্রিয়া করেন ডঃ আগরওয়াল এবং তার টিম, যার মধ্যে ছিলেন ডঃ নিকোলা জুডিথ ফ্লীন, এমডি, বিভাগীয় প্রধান – পেডিয়াট্রিকস এবং নিওনাটোলজি, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি এবং ডঃ সুনন্দন বসু, সিনিয়র কনসালটেন্ট, ব্রেন অ্যান্ড স্পাইন সার্জেন, মেডিকা ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল ডিজিজেস ( মাইন্ড)।

গীতাঞ্জলির অভিভাবকদের জন্য পুরো বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না, বরং অনিশ্চয়তা ছিল। গীতাঞ্জলির বাবা বিকাশ গুপ্তা, সাধারণ একটি হকার এবং তার মা পাম্মি দেবী সাধারণ গৃহবধূ। অস্ত্রোপচারের জন্য অর্থ সংস্থান করা খুব কঠিন ব্যাপার ছিল। মেডিকাতে তারা যে শুধুমাত্র চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন এমন না, তার সাথে হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট তাদের পাশে থেকেছে কিভাবে পরিস্থিতির সমাধান করা যেতে পারে। অ্যাক্সিডেন্টের জন্য গীতাঞ্জলির মুখের হাড় থেকে টিস্যু আলাদা হয়ে গিয়েছিল। তবে বয়স মাত্র পাঁচ হলেও গীতাঞ্জলি এই ট্রমা কাটিয়ে ওঠে, বিশেষ করে যেভাবে তার মুখের ডান দিক, চামড়া, চোখের মণি আর নাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।গীতাঞ্জলির ক্ষেত্রে পুরোদস্তুর ফেসিয়াল রিকনস্ট্রাকশন করা হয়। পাঁচ সপ্তাহ ধরে পুরো রিহ্যাব চলে। অস্ত্রোপচারের পর পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়। বর্তমানে চোখ খোলা আর বন্ধ করতে পারছে গীতাঞ্জলি। এছাড়া নাকের অংশটি সাফল্যের সাথে পুরো ঠিক করা গিয়েছে, যা তার বাবা মায়ের কাছে খুব চিন্তার ছিল।
ডঃ অখিলেশ কুমার আগরওয়াল পুরো পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে জানান,”যখন গীতাঞ্জলিকে তড়িঘড়ি হসপিটালে আনা হয় ভর্তি করার জন্য, তখন সে ভীষণ ট্রমার মধ্যে ছিল। তবে ওই কঠিন অবস্থার মধ্যে গীতাঞ্জলির সাহস আমাদের আশার আলো দেখিয়েছিল। সামগ্রিক চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম একটি দিক ছিল তার দৃষ্টিশক্তি বাঁচানোর দিকটি। তবে বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না কারোর তার চোখের সকেটে ছিদ্র তৈরি হয়েছিল। তবে দ্রুত অস্ত্রোপচারের দিকটি সহজ ছিল, কারণ তাতে অনেকক্ষণ চোখ খুলে রাখতে হবে এবং বড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে ভাগ্যক্রমে, সময়মত চিকিৎসা শুরু করে, গীতাঞ্জলি চোখ খুলে রাখতে পারে এবং তার দৃষ্টি ঠিক থাকে। গত মাসে হসপিটাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর, গীতাঞ্জলি নিয়মিত চেকআপের মধ্যে রয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি নজরে রাখছি এবং যে কোন সমস্যা বা জটিলতা তৈরি হলেই সেটি খতিয়ে দেখছি। “
গীতাঞ্জলি কুমারীর বাবা বিকাশ গুপ্তা বলেন,”গত বছর ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখ, আমরা সকালে বেড়িয়েছিলাম। আমাদের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল। আমার মেয়ে খুব যন্ত্রণায় ছিল, সারা মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। আমরা ওকে চটজলদি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই। তারা আমাদের বলে দ্রুত মেডিকাতে স্থানান্তরিত করার জন্য। পরের দিন আমরা ওকে মেডিকাতে ভর্তি করি। একদিকে আমরা ভীষণ চিন্তায় ছিলাম আমাদের মেয়ের প্রাণ বাঁচানো নিয়ে। সত্যি কথা বলতে কি, এই ধরনের চিকিৎসা খুবই ব্যয়সাধ্য। তবে হসপিটালের তরফ থেকে খুবই সাহায্য করা হয়। তারা আমাদের অবস্থা বুঝতে পারেন এবং সহযোগিতা করেন। আমরা চিরকাল ঋণী থাকব মেডিকার ডঃ অখিলেশ কুমার আগরওয়াল এবং তার টিমের কাছে। তাদের জন্যই আমার মেয়ে গীতাঞ্জলি নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছে।”
অয়নাভ দেবগুপ্ত, জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, বলেন,”গীতাঞ্জলির এই জার্নি মনে করায় যে মেডিকা শুধুমাত্র চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে না, এর সাথে সাহায্য করে, যখন প্রয়োজন পড়ে। গীতাঞ্জলির জীবন বাঁচানো এবং তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য কঠিন কাজ ছিল। আমাদের ডাক্তারেরা ভীষণ পরিশ্রম করে অসাধ্য সাধন করেছেন।
মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল সম্পর্কে: মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান হসপিটাল চেন, শেষ কয়েক বছরে একাধিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র তৈরি করেছে পূর্ব ভারত জুড়ে। বর্তমানে এই গ্রুপের উপস্থিতি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, বিহার এবং আসামে।

Subscribe to our magazine

━ more like this

Global Life Coach Kavyal Sedanni Leads Empowering Healing Session in Kolkata

The "Evening of Love & Light," a transformative event featuring internationally acclaimed wellness coach and psycho-spiritual healer, Kavyal Sedanni, concluded with resounding success earlier...

ILEAD Revolutionizes Healthcare in Remote India with AI-Powered Telemedicine

The Institute of Leadership, Entrepreneurship and Development (iLEAD) has successfully pioneered a groundbreaking healthcare initiative in the Sundarbans region, leveraging artificial intelligence (AI) and...

খিদিরপুরের শ্রী জগন্নাথ সেবা সমিতির সাংস্কৃতিক শাখা, উৎকলা, ‘রথযাত্রা এবং ওডিশা ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’ মহাউৎসব উৎযাপনের কথা ঘোষণা করছে

খিদিরপুরের শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের সাংস্কৃতিক শাখা উৎকলা, ২৭ জুন থেকে ৫ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত পবিত্র 'রথযাত্রা এবং ওডিশা উৎসব ২০২৫' উদযাপনের জন্য প্রস্তুত। এই...

Pioneering Medical Education and Comprehensive Care: HOPECON’25 Gears Up in Kolkata

The official curtain raiser for HOPECON’25, the highly anticipated fourth edition of India’s most comprehensive and multidisciplinary medical conference, was successfully held today, Thursday,...

The Hidden Price of Convenience: How Quick Meals Are Quietly Raising Your Blood Pressure

In today’s busy world, convenience foods have become a trusted ally. Ready-to-eat meals, frozen dinners, packaged snacks, and fast-food options are designed to fit...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here