মণিপাল হসপিটাল, ঢাকুরিয়া সফলভাবে ৮০% স্পাইনাল কর্ডে চেপে বসা বিরল টিউমার অপসারণ করল, ২৮ বছর বয়সী মহিলার জীবনে ফিরল নতুন আশার আলো

Date:

Share:

জীবনে ছুটে চলা এক ২৮ বছর বয়সী কর্মজীবী তরুণীর জন্য হঠাৎ করেই সবকিছু থমকে দাঁড়ায়, যখন তার শরীর তার কথা শোনা বন্ধ করে দেয়। হাঁটুতে ব্যথা ও হঠাৎ হঠাৎ ভারসাম্য হারানোর মতো ছোটখাটো সমস্যা থেকে শুরু করে তা গিয়ে দাঁড়ায় হাত-পা চলাচলের অক্ষমতায়। কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি এমন অবস্থায় পৌঁছান, যেখানে তিনি খেতেও পারছিলেন না—খাবার নাক দিয়ে বেরিয়ে আসছিল, এবং তাকে বিকল্প উপায়ে খাওয়ানো হচ্ছিল। একসময়ের স্বাধীন জীবনযাত্রা রূপ নেয় এক অসহনীয় যন্ত্রণার রুটিনে।

এই দ্রুত অবনতির কারণ অনুসন্ধানে তিনি মণিপাল হসপিটালস, ঢাকুরিয়ার কনসালট্যান্ট নিউরোলজি স্পেশালিস্ট ডাঃ সিতাংশু শেখর নন্দীর সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং পরে কনসালট্যান্ট নিউরোসার্জন ডাঃ আর. এন. ভট্টাচার্যের কাছে রেফার করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় রোগীর অবস্থা ছিল অত্যন্ত জটিল। উপরের এবং নিচের উভয় অঙ্গেই ধীরে ধীরে দুর্বলতা, ডান পাশে বেশি অনুভূতিহীনতা এবং প্রায় সম্পূর্ণ গিলতে না পারার মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। তিনি তার দৈনন্দিন কাজ একা করতে পারছিলেন না।

জটিল স্পাইনাল সার্জারির পর আজ তিনি সহায়তায় হাঁটতে পারছেন এবং স্বাভাবিকভাবে খেতে পারছেন। তিনি ফিরে পেয়েছেন শুধুমাত্র দৈহিক সক্ষমতাই নয়—নিজের আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা এবং ভবিষ্যতের আশাও।

ডাঃ সিতাংশু শেখর নন্দী বলেন, “যখন উনি আমাদের কাছে আসেন, তখন উনি কথা বলতে এবং গিলতে পারছিলেন না। পরীক্ষায় গলায় প্যারালাইসিস এবং চার অঙ্গে দুর্বলতা—কোয়াড্রিপ্লেজিয়া ধরা পড়ে। এমআরআই রিপোর্টে দেখা যায় মেরুদণ্ডের উপরের অংশ থেকে মস্তিষ্কের নিম্নাংশ (মেডুলা) পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বিরল টিউমার। এ ধরনের অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এটি ছাড়া রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্ভব ছিল না। রোগীর ইনট্রামেডুলারি হেমাঞ্জিওব্লাস্টোমা ছিল, যা একেবারেই বিরল। সার্জারির সময় নিউরোমনিটরিং ব্যবহারের ফলে আমরা অত্যন্ত সতর্কভাবে টিউমারটি অপসারণ করতে পেরেছি এবং কোনও নিউরোলজিক্যাল ক্ষতি হয়নি। রোগীর সেরে ওঠার গতি আমাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে।”

ডাঃ আর. এন. ভট্টাচার্য বলেন, “এমআরআই-তে যা দেখা গিয়েছিল, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। টিউমারটি প্রায় ৮০% স্পাইনাল কর্ড দখল করে রেখেছিল এবং নড়াচড়া, গিলতে পারা ও শ্বাসপ্রশ্বাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন নিয়ন্ত্রণকারী সেন্টারগুলোর উপর প্রভাব ফেলছিল। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টিউমারটি ব্রেনস্টেম-এর খুব কাছে ছিল, যেখানে খুব সামান্য ভুল রোগীকে চিরতরে ভেন্টিলেটরে পাঠিয়ে দিতে পারত, কিংবা প্রাণহানিও ঘটতে পারত।”

এই ঝুঁকি কমাতে নিউরোসার্জারি টিম—ডাঃ আর. এন. ভট্টাচার্য, ডাঃ সিতাংশু শেখর নন্দী এবং ডাঃ নিরূপ দত্ত মিলে ইনট্রাঅপারেটিভ নিউরোমনিটরিং (IONM) সহ সার্জারির সিদ্ধান্ত নেন। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর স্নায়ুর প্রতিক্রিয়া রিয়েল টাইমে মনিটর করে, যার ফলে স্থায়ী ক্ষতির ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

অ্যানেস্থেসিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ডাঃ প্রখর জ্ঞানেশ বলেন, “এটি কোনও সাধারণ অ্যানেস্থেশিয়ার কেস ছিল না। প্রতিটি ধাপে হিসাব করে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সার্জারি ও অ্যানেস্থেশিয়ার টিমের পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বিশ্বাসই এই কঠিন অস্ত্রোপচারকে সফল করেছে। যিনি আসার সময় হাঁটতেই পারছিলেন না, তিনিই এখন হাঁটছেন, হাসছেন—এই মুহূর্তগুলোই আমাদের কাজের আসল প্রাপ্তি।”

অস্ত্রোপচারটি হয় ২২ মার্চ ২০২৫, যেখানে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে টিউমারটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা হয়। অস্ত্রোপচারের দুই-তিন দিনের মধ্যেই রোগীর গিলতে পারার ক্ষমতা ফিরে আসে। এরপর ধীরে ধীরে অঙ্গের শক্তি বাড়তে থাকে। ঘাড়ের ব্যথা কমে এবং তিনি এক সপ্তাহের মধ্যেই সাহায্যে হাঁটতে সক্ষম হন।

তিনি ৪ এপ্রিল, ২০২৫-এ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। এখন তাকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করতে হবে এবং নিউরোলজিকাল ফলো-আপে আসতে হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর MRI করা হবে যেন টিউমার পুনরায় না ফিরে আসে, কারণ এমন বিরল টিউমারগুলিতে পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা থাকে।

মণিপাল হসপিটালস সম্পর্কে: ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা মণিপাল হসপিটালস, প্রতিবছর ৭ মিলিয়নের বেশি রোগীকে পরিষেবা প্রদান করে। বহু-বিভাগীয় এবং তৃতীয় স্তরের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি বহির্বিভাগেও এর বিস্তার রয়েছে। ২০২৩ সালে মেডিকা সাইনারজি ও এএমআরআই হসপিটালস অধিগ্রহণের পর বর্তমানে মণিপাল হসপিটালসের ভারতজুড়ে ৩৭টি হাসপাতাল, ১৯টি শহর, ১০,৫০০+ বেড, ৫,৬০০+ চিকিৎসক এবং ১৮,৬০০+ কর্মী রয়েছে। সংস্থাটি NABH এবং AAHRPP অনুমোদিত, এবং নেটওয়ার্কের বেশিরভাগ হাসপাতাল NABL, ER ও Blood Bank অনুমোদিত। মণিপাল হসপিটালস বারংবার বিভিন্ন গ্রাহক সমীক্ষায় সবচেয়ে সম্মানিত এবং রোগী-প্রস্তাবিত হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

Subscribe to our magazine

━ more like this

Rotary Calcutta Mahanagar Adopts Boynala Village, Unveils Rural Development Blueprint

In a landmark move towards sustainable rural development, Rotary Calcutta Mahanagar, under the leadership of President Sanjay Bhalotia, has officially adopted Boynala Village, located...

Birla Opus Paints Celebrates Indian Heritage Through the Power of Colour

Building on its core philosophy of ‘Duniya Ko Rang Do’, Birla Opus Paints, housed under Aditya Birla Group’s Grasim Industries, launched their new brand...

Genesis Hospital in Kasba, Kolkata celebrates National Doctor’s Day

Genesis Hospital Kasba, Kolkata celebrated their doctors and local general practitioners of Kolkata, West Bengal at its premises in the auditorium. The Doctors' Day was...

Škoda Auto India achieves its highest-ever half-yearly salesSells 36,194 units between January and June 2025

Škoda Auto India is keeping its foot on the accelerator as it celebrates its 25th anniversary in India and 130th year globally. With 36,194...

Bandhan Bank extends CSR support to Assam Cancer Care Foundation

Bandhan Bank, a pan-India universal Bank, today announced the extension of its CSR grant to Assam Cancer Care Foundation (ACCF), a partnership between the...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here